হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন ২৫ বছর বয়সী আঁখি। সঙ্গে তিন বছরের মেয়ে মারিয়ামও রয়েছে। তবে সড়কে আট বছরের ছেলে আরাফাত আব্দুল্লাহর প্রাণ গেলেও জানেন না মা। গর্ভধারিণীর অজান্তেই ছেলের কবর খুঁড়লেন স্বজনরা।
চিকিৎসাধীন মা বারবার ছেলেকে খুঁজলেও স্বজনরা বলছেন ‘আরাফাত ভালো আছে, বাড়িতে সুস্থ আছে’। কিন্তু মায়ের মন শান্ত হচ্ছে না। তাই স্বজনদের কাছে ক্ষণে ক্ষণে ছেলের কথা জানতে চাচ্ছেন আঁখি। এ সময় কান্না চেপে এ কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন তার কাছে থাকা আরাফাতের নানি মাহিনুর বেগম ও মামা মেহেদি হাসান।
হৃদয়বিদারক ঘটনাটি বরিশালের। রোববার ভোরে বরিশালের উজিরপুরের বামরাইল ইউনিয়নে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সানুহার এলাকায় বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জনের মধ্যে আরাফাতও রয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলায় সার্জারি (মহিলা) ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আঁখি ও তার মেয়ে মারিয়াম।
আরাফাতের নানি মাহিনুর বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, কীভাবে আঁখিকে জানাই আরাফাত মারা গেছে। তার মরদেহ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে। বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
আঁখি বেগমের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার মানপাশা গ্রামে। তিনি একই গ্রামের ওমানপ্রবাসী মনির হাওলাদের স্ত্রী। আঁখি-মনির দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। রোববার ভোর ৫টার দিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুরে সানুহা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আঁখি বেগমের মেজো ছেলে আরাফাত নিহত হয়। আহত হন আঁখি ও তার মেয়ে মারিয়াম।
আঁখির ভাই মেহেদি হাসান বলেন, মেজো ছেলে ও মেয়ে নিয়ে গত সপ্তাহে আঁখি তার মামাশ্বশুরের (মনির হাওলাদারের মামা) ঢাকার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল। প্রায় এক সপ্তাহ সেখানে থাকার পর শনিবার রাতে বাড়ির উদ্দেশ্যে ছেলে-মেয়ে নিয়ে গাড়িতে ওঠে আঁখি। রোববার সকালে উজিরপুর থানা ও শেবাচিম হাসপাতাল থেকে নিহত ও আহত হওয়ার খবর পাই। আঁখির শ্বশুরবাড়ির লোকজন দুপুর দেড়টার দিকে আরাফাতের লাশ উজিরপুর থানা থেকে গ্রহণ করেছে। আমরা আছি হাসপাতালে।